রজনী ( উপন্যাস) পর্ব -১
ক্যাটাগরি: ক্যাটাগরি বিহীন | তারিখ: 22/12/18 | No Comment
( আমার লেখা প্রথম ও শেষ উপন্যাস । এই উপন্যাসটি একটি সত্যি ঘটনার উপরে ১৯৯৮ সালের প্রেক্ষাপটে লেখা । এই উপন্যাসে কোনো শিক্ষণীয় কিছু নাই , জাস্ট একটি সত্যি প্রেমের কাহিনীকে উপন্যাসের মত করে পর্ব পর্ব করে আপনাদের সাথে উপস্থাপন করবো । খুব হালকা ও সাহিত্যমানহীন এই লেখা পড়ে সময় নষ্ট করার আগে আরেকবার চিন্তা করুন , আপনি কি এই লেখা পড়ে সময় নষ্ট করবেন ?
.
আজ থেকে ২০ বছর আগে এই উপন্যাসটি লিখেছিলাম ।
.
আজ পড়ুন ১ম পর্ব ! অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা যাবে না । ধারাবাহিক ভাবে পর্ব পর্ব আকারে এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে । পাত্রপাত্রীর নাম , স্থান কাল্পনিক )
.
রজনী
মোঃ ফাইজুল হক
পর্বঃ ১
সলেমান মাস্টার আজ শুভর হস্ত রেখা দেখে ভবিষ্যৎবর্ণনা করছেন । সলেমান মাস্টার এ বাড়ীর পুরনো লোক । লোক বলা ততটা ঠিক না , পুরনো মাস্টার । মঈনুদ্দিন কে ক্লাশ থ্রির অঙ্ক করানো দিয়ে এ বাড়ীতে তার মাস্টারি শুরু হয় । মঈনুদ্দিন আজ মেডিকেল এ ফোর্থ ইয়ারে পড়ে । সলেমান মাস্টার এখনও এ বাড়ী পারিবারিক মাস্টার । শুভ এ বাড়ির কাজের ছেলে । এ বাড়িতে তার কাজ তিনটি । গরুর জন্য ঘাস কাটা, বাজার নিয়ে আসা , আর পড়ালেখা শিখা । সলেমান মাস্টার অভিজ্ঞ জ্যোতিষীর মত শুভর হস্ত রেখা দেখছেন এবং রেখার অর্থ বলে যাচ্ছেন । তিনি যে হস্তরেখা বুঝেন তাও নয় । তবুও শুভর সাথে তিনি সত্য কথাই বলছেন । তাঁর মনের সাথে সব কথাই মিলে যাচ্ছে । মাস্টার এর উপর শুভর অগাদ বিশ্বাস ।
সলেমান মাস্টার সময় কাটাচ্ছেন । হস্তরেখা বিচার একটা ছুতা । নানা ছল ছুতা করে তিনি এ বাড়িতে সময় কাটান । সলেমান মাস্টার কে কেও তেমন একটা গুরুত্ব দেয়না তবুও তাঁর ধারনা সবাই তাঁকে খুব গুরুত্ব দেয় । সলেমান মাস্টার হাত দেখছেন ।
শাস্ত্রমতে তোমার তিন জন শত্রু । একজন বড় , দুইজন ছোট । কি ঠিক ?
হ্যাঁ ঠিক কইছেন , দুইজন ছোট শত্রু , একজন ডালিম , অন্যজন নাসির । আরো বড় শত্রু হইল গিয়া নাম কমু ?
না, থাক, নাম বলতে হবেনা । তিন জন শত্রু তা তো ঠিক ।
ঠিক মানে একশো ঠিক । আগেও জানতাম আমার শত্রু আছে । আজ তয় ঠিক মত জানলাম ।
তুমি যখন হেটে জাও মনে হয় তোমার পেছনে কে যেন হাটছে । কিন্তু পিছন ফিরলে দেখ কেও নেই । কি ঠিক?
হ ঠিক ।
রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখ সাপ তেড়ে আসছে অথবা কুকুর তেড়ে আসছে । তুমি দোড় দিতে চাও কিন্তু পা পাথর হয়ে গেছে নড়ে না । চিৎকার দিতে চাও কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হয়না । কষ্টে বুক ফেটে যেতে চায় কিন্তু ভয় পেয়ে তোমার ঘুম ভেঙ্গে যায় । ঠিক ?
ঠিক কইছেন । পাও এক্কেরে অবস হইয়া থাকে , মুখ বোবা হইয়া যায় ।
তোমার পিছনে একটা খারাপ জিন আছে । বোবা ভুত ও এইসব করে ।
আমারে একটা জিনের তাবিজ দিবেন ?
হু দেব, তবে একটু দেরি হবে । জিনের তাবিজ সবদিন লেখা জায়না । আমাবস্যা রাতে লিখতে হয় । আরও ঝামেলা আছে ।
কি ঝামেলা ?
এই ধর তাবিজ লেখার সময় শরীরে কোন কাপড় থাকতে পারবেনা, একটা সুতোও পর্যন্তও না । বোবা ভুতের তাবিজ লেখা সহজ জিনিশ না । মিশরিও কেরামত । মস্ত দগের জিনিস । বহুত তেজ ।
শুভর বিশ্বাস আরো বাড়ে । যে তাবিজ লিখতে গায়ে কাপড় রাখা যায়না সে তাবিজ সাধারন হতে পারেনা ।
সব জায়গায় সব কথা বলা যায়না, সব রকম চলা যায়না । সাধারন এই বোধটুকু সলেমান মাস্টারের মধ্যে নেই । ব্যক্তিত্ব বলে যে একটা ব্যাপার আছে সেটা তাঁর মাথায় ঢুকেনা । বলা যায় তিনি ব্যক্তিত্বহীন লোক । ব্যক্তিত্বহীন হলেও তিনি সরল লোক । মনের মধ্যে কোন গরল নেই । সবাইকে সরল ভাবে বিশ্বাস করেন, মন খুলে কথা বলেন । সলেমান মাস্টারের একটা ভাল গুন আছে । তিনি কবিতা লিখেন , সব কবিতাই প্রেমের কবিতা । অন্য কোন কবিতা তিনি লিখতে পারেন না । কবিতা নিয়ে আলোচনা করার সময় তিনি এমন মুডে কথা বলেন মনে হয় তিনি মস্ত একজন দার্শনিক ।সাধারন মানুষের ধারনা সলেমান মাস্টারের মাথায় সিট আছে । এ নিয়ে সলেমান মাস্টারের কোন মাথা ব্যাথা নেই । কেও তাকে পাগল ভাবলে তিনি হাসেন । সেই হাসির অবশ্য একটা কারন আছে । তিনি নিজেকে বিখ্যাত মানুষের একজন ভাবেন । পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষদেরকে প্রথমে অনেকেই পাগল বলেছে । তাঁকে পাগল বলায় তিনি খুশী । তিনি মনে করেন এটা তাঁর বিখ্যাত হবার একটা লক্ষন । বিখ্যাত মানুষেরা ভাবেন বেশি রাগেন কম । বিখ্যাত মানুষেরা রাগ হজম করতে পারেন । তাদের হৃদয় বিশাল ।
হস্ত রেখা বিচার এখন বন্ধ । শুভ ঘাস কাটতে গেছে । সলেমান মাস্টার এখন আসমাকে পড়াচ্ছেন । আসমা এই বাড়ীর ছোট মেয়ে । ক্লাস নাইনে পড়ে । আজকে পড়ায় তাঁর মন বসছেনা । রাতে বিশ্রী সব স্বপ্ন দেখেছে । স্বপ্ন দৃশ্য এখনো তাঁর চোখের সামনে ভাসছে । শেষ রাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় । কি বিশ্রী স্বপ্ন – আসমার যেন বিয়ে হচ্ছে । চারদিকে বিয়ের ধুমধাম । কিছু পরেই বিয়ে পরানো হবে ।আসমার দৃষ্টি চলে গেছে বরের দিকে । সুন্দর তরুন বরকে বন্ধু বান্ধব রা ঘিরে রেখেছে । বিয়ের পোশাকে বরকে রাজপুত্রের মত লাগছে । হঠাত করে বরের চোখ দুটো ইঁদুরের চোখের মত ছোট হয়ে গেল । বরের নাকটা বাড়তে শুরু করেছে । হাতির শুড়ের মত বাড়ছে । দেখতে দেখতে নাকটা অনেক লম্বা হয়ে গেছে । বিড়ালের লেজের মত দুলতে দুলতে আসমার দিকে এগিয়ে আসছে । ভয়ে আসমার হাত পা অবশ হয়ে আসছে । মুখ শুকিয়ে গেছে । শুড়টা আসমার কাছে এসে তাঁকে পেচিয়ে ধরছে । শুড়টা তাঁকে শূন্যে তুলে কেয়েকটা ঘুরপাক দিলো । আসমার বমি আসছে, চিৎকার দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না । ঘুম, ভেঙ্গে গেল ।
সলেমান সাহেব বলে যাচ্ছেন ত্রিভুজের তিন কোনের সমষ্টি একশ আশি ডিগ্রি হবে । এর বেশি হবেনা কমও হবেনা । তা সে যে আকারের ত্রিভুজই হউক না কেন । পৃথিবী গোল্লায় গেলেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হবেনা । বুঝেছ ?
আসমা চুপ করে রইল । তাঁর মানে তাঁর কানে কিছুই ঢুকছেনা । আসমা বলল স্যার আজকে আমার পড়তে ইচ্ছে হচ্ছেনা ।
কেন?
ভাল্লাগছেনা । আজ থাক । কাল পড়বো ।
তোমার কি শরীর খারাপ?
হ্যাঁ , খুব খারাপ লাগছে ।
আসমা মিথ্যে কথা বলছে । শরীর তাঁর মোটেই খারাপ না । মন খারাপ । মন খারাপের কথা সারের কাছে বলা ঠিকনা । বললে একশ একটা প্রশ্ন করবেন । হাজারতা নসিহত করবেন । মন খারাপ কেন? শুধু শুধু মন খারাপ হয়না । মন খারাপ হবার কোন কারন থাকতে হবে । কারন বিনা কোন কাজ হয়না । কাজ হলে তাঁর একটা কারন অবশ্যই থাকতে হবে । এটাই যুক্তিবিদ্যার নিয়ম । স্যারের অত সব কথা শোনার ধৈর্য্য আসমার নেই । তাঁর চেয়ে একটা মিথ্যা বলে স্যারকে বিদায় দেয়া ভাল । প্রয়োজনে দু একটা মিথ্যা কথা বলতে হয় । সলেমান স্যার বললেন , ঠিক আছে শরীর খারাপ লাগলে আজ আর পড়তে হবেনা , শরীর খারাপ থাকলে মনও ভাল থাকেনা । মন খারাপ থাকলে তো আর মনোযোগ দেয়া যায়না, মনোযোগ ছাড়া পড়া হয়না । আজ রেস্টে থাকবে । ক্লাসে যাবার দরকার নেই । আগে শরীর ঠিক রাখতে হবে । তারপর অন্যসব । লেখাপড়া তো জীবনের জন্য । জীবন নষ্ট করে লেখা পড়ার কোন মানে হয়না । আসমার এতসব কথা শুনতে ইচ্ছে করেনা । সলেমান স্যার সবসময় বেশি কথা বলেন । সেজন্য আসমা তাঁকে পছন্দ করেনা । তারপরও স্যারের দু একটা কথা আসমার ভীষণ ভাল লাগে । তখন স্যারকে আর খারাপ মনে হয়না ।
জাহানারা বেগম আসমার মা । তিনি চা বিস্কুট নিয়ে এসেছেন । পড়াবার সময় স্যারকে চা বিস্কুট দেয়া হয় । চা শেষ করে স্যার চলে গেছেন । জাহানারা বেগম আসমাকে বললেন , তর শরীরে কি অসুবিধা ?
কিছুনা ।
কিছু না হলে পড়িস না কেন ?
মন ভাল লাগছেনা ।
জাহানারা বেগমের মনটা খারাপ হয়ে গেল । এই বয়সের মেয়েদের মন খারাপ থাকা ভালনা । তিনি চোখ বড় বড় করে বললেন , মন খারাপ কেন ?
এম্নি ।
এম্নি এম্নি মন খারাপ হয়না ।
রাতে খারাপ স্বপ্ন দেখেছি ।
জাহানারা বেগমের মনটা হাল্কা হয়ে গেল । স্বপ্নের জন্য মন খারাপ, বাঁচা গেল । তিনি ভেবেছিলেন অন্য কিছু । তিনি যেতে যেতে বললেন শোন ,সাতাশ বার আল হাকিমু এই দুয়াটা পড়ে পানির কাছে বসে একা একা স্বপ্নটা বলে আয় । এই দুয়া পড়ে পানির কাছে স্বপ্ন বললে স্বপ্ন পানির মত সোজা হয়ে যায় । কোন সমস্যা থাকেনা । জাহানারা বেগম চলে গেলেন না , আবার ফিরে এসে বললেন স্বপ্নটা কখন দেখছিস ?
শেষ রাতে ।
তোর কোন অসুবিধা ছিল নাকি ?
না, অসুবিধা ছিলনা, ভাল আছি ।
শেষ রাতের স্বপ্ন সত্যি হয় বেশি, তোর যদি চিন্তা লাগে তাহলে খাবনামা টা খুলে দেখতে পারিস ।
আসমার কোন কথা শুনতে ইচ্ছে করছেনা । কোথাও ঘুরে আসতে পারলে ভাল হত । এখন তা হবার নয় । মেয়েরা ইচ্ছে করলেই ঘুরতে পারেনা ।
হাবিবা আসমার তিন বসরের বড় বোন । এইচ,এস,সি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে । হেভি ব্রিলিয়ান্ট । প্রথম দেখায় মনে হয় হদ্দ বকা । কথা কম বলে এজন্য প্রথমে বোকা মনে হয় । হাবিবা সুদর্শনা । সলেমান স্যারের জন্য সেও মাঝে মধ্যে চা বিস্কিট নিয়ে আসে । সলেমান স্যারের মতে চা নিয়ে আসার সময় তাঁকে নাকি বিমান বালার মত মনে হয় । সলেমান স্যার হাবিবাকে বিমান বালা বলেই ডাকেন । হাবিবার বিরক্তি লাগে । স্যারের চোখ ভালনা । কেমন কেমন করে তাকায় । হাবিবার চোখে সলেমান স্যারকে বানরের মত লাগে । হাবিবার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় সলেমান স্যারের গলায় বানরের মত একটা শিকল লাগিয়ে উঠোনে নিয়ে বানরের খেলা দেখাতে । বানরের খেলা দেখাতে পারলে মজা হত । হাবিবার মাথায় উদ্ভট উদ্ভট চিন্তা আসে । চিন্তা গুল কাজে লাগানো জাচ্ছেনা । উদ্ভট চিন্তা গুলো ভাল মত লিখতে পারলে সুন্দর একটা সাহিত্য হয়ে যেত । হাবিবা দু একটা কবিতা লিখতে পারে কিন্তু গল্প উপন্যাস লিখতে পারেনা । ইদানিং গল্প লিখার চেষ্টা করছে । ছোট ছোট দুটো উপন্যাস লিখেছে । কেমন হয়েছে কে জানে । কাওকে দেখাতে পারলে ভাল হত । সলেমান স্যারকে দেখান যায় । তাতে সমস্যা আছে । সলেমান স্যার এমনিতেই কথা বলার সুযোগ পান না । তাঁর উপর উপন্যাস পড়তে দিলেতো কথাই নেই । প্রত্যেকটি শব্দ নিয়ে কম করে হলেও দশটি করে মন্তব্য করবেন । সেইযে পেচাল শুরু হবে আগামী একচল্লিশ দিনে তা আর থামবেনা । এমন করে নসিহত করবেন যে মনে হবে তিনি উপন্যাস বিশারদ হয়ে গেছেন । আসমার সাথে হাবিবার গলায় গলায় ভাব । দুই বোন যেন দুই বান্ধবী । দুই বোনের মধ্যে মিল না থাকলে এবাড়িতে তাদের জন্য থাকা অসহ্য হয়ে উঠত ।
এ বাড়ীর কিছু আলাদা নিয়ম আছে । রেডিওতে গান শোনা যাবেনা । ছবিওয়ালা কোন কেলেন্ডার দেয়ালে টানানো যাবেনা । কবিতা, উপন্যাস লিখা যাবে কিন্তু উপন্যাস পড়া যাবেনা । খাবার সময় কথা বলা যাবেনা । কোন রোগ হলে প্রথম দিনে কোন ঔষধ সেবন করা যাবেনা । প্রথম চব্বিশ ঘন্টা চলবে ঝারফুক তাবিজ তদবির । মটেও উন্নতি না হলে তারপরে ঔষধ ব্যবহার করা যাবে । তবে প্রথম চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গাছগাছড়া লতা পাতার রস সেবন চলবে । আসমা হাবিবার দাদা আজিমুদ্দিন সাহেবের মতে আগে দোয়া তারপর দাওয়া । গাছপালা আল্লাহর সৃষ্টি তাই গাছপালার ঔষধ সেবনে কোন আপত্তি নেই কিন্তু এলোপ্যাথি হোমিওপ্যাথি এসব জিনিস মানুষের তৈরি । গাছপালার কথা কোরআন শরীফে আছে । লোকমান হেকিমের কথাও তো কোরআন পাকে বলা হয়েছে । শোনা যায়, তিনি গাছের কথা বুঝতেন , গাছ পালা তাঁর সাথে কথা বলত । এ গাছ বলত হে লোকমান পেট ব্যথা হলে আমার রস পান করবে । আরেক গাছ বলত হে লোকমান আমাশা হলে আমার শিকড় ছেচে খাবে । এসব শোনা কথা মাত্র । তবে আজিমুদ্দিন সাহেবের ধারনা সব কথা সত্যি, লোকমান (আঃ) এর সাথে গাছ কথা বলত ।
আসমা চলে এসেছে হাবিবার কাছে । হাবিবার সাথে কথা বললে হয়তো মনটা ভাল হতে পারে । হাবিবার মধ্যে একটা আশ্চর্য ব্যাপার আছে । এমনিতে সে কথা কম বলে কিন্তু আসমা কাছে থাকলে তাঁর মুখে খই ফুতে । কথার কোন সীমারেখা থাকেনা । এরা দু বোন বলতে পারেনা এমন কথা পৃথিবীতে নেই । নিজেরা দুজনেই শুধু সব কথা বলে । বাইরে সব ঠিকঠাক । কথা কম । আসমাকে দেখে হাবিবা বলল –
ঃ সালাম ম্যাডাম , আসেন , বসেন , কি হেতু ম্যাডামের আগমন হল ? এই অধম প্রস্তুত । আদেশ করুন ।
ঃ থামতো হাবিবা, এসব ভাল লাগেনা ।
ঃ ভাল লাগবেনা কেন ?
ঃ এম্নিই ভাল লাগে না ।
ঃ কারো প্রেমে পরেছিস নাকি ?
ঃ বেহায়ার মতো কথা বলিস না তো । তুই গিয়ে প্রেমে পড় ।
ঃ আমারতো মন খারাপ না । আমি প্রেমে পড়ব কেন ? তোর তো মন খারাপ ।
ঃ তোর বুঝি মন খারাপ করেনা ।
ঃ না, কখনো না ।
ঃ না, তোর মন খারাপ করেনা । সেদিন শিপন ভাইয়া চলে গেলে তো ফ্যাসর ফ্যাসর করে কেদে দিলি ।
ঃ কি জন্য কেদে ছিলাম তা জানিস ? আমার মাথা ব্যাথা করছিল, তাই কেদেছিলাম । আবোল তাবোল বলবিনা । খারাপ হবে কিন্তু ।
ঃ হাবিবা, একটা কথা শোন ।
ঃ বল ।
ঃ আজ রাতে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি ।
ঃ কি স্বপ্ন ?
ঃ দেখি আমার বিয়ে হচ্ছে ।
ঃ কি, তোর বিয়ে ?
ঃ হ্যাঁ ।
ঃ সারাদিন বিয়ে নিয়েই ভাবিস । তো দেখবি কি মরে যাচ্ছিস ?
ঃ হায় আল্লাহ ! জিবনেও আমি বিয়ের কথা ভাবিনা । তুই ভাব ।
ঃ স্বপ্নে কি তোর বিয়ে হয়ে গেছে ?
ঃ না একটু পরে হবে এমন দেখেছি ।
ঃ বর কেমন ? সুন্দর ?
ঃ হ্যা ।
ঃ হ্যান্ডসাম ?
ঃ হ্যা ।
ঃ উহ , দারুন, হ্যান্ডসাম হিরো । দেখতে কার মত হবে ? শাহ্রুখ খানের মত ?
ঃ অতসব মনে নেই , স্বপ্নে বিয়ে দেখলে কি হয় হাবিবা ?
ঃ বিয়ে দেখাত খারাপ স্বপ্ন । বিয়ে হওয়া মানে মারা যাওয়া ।
ঃ মরা মানুষের একটা গান আছে জানিস ? আমারে সাজাইয়া দেরে নওশারি সাজন । অর্থ হল আমাকে কাফনের কাপড় পড়িয়ে দাও । অন্য জীবনে যাচ্ছি । আর দেখা হবেনা । হায় !
হাবিবা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল । আসমার চোখে মুখে ভয় বিষাদের ছায়া । কাদো কাদো করে বলল , “ আসমা আমার খুব খারাপ লাগছে । মনে হয় মরে যাব । হাবিবা প্লিজ আমাকে একটু জরিয়ে ধর । সত্যি আমার ভয় লাগে ।
হাবিবা বলল –তুই ভয় পাচ্ছিস কেন, সব স্বপ্ন সত্যি হয়না । ইকবাল স্যার বলেছেন কি জানিস , স্যার বলেছেন – স্বপ্ন সপ্নই এর কোন সত্য মিথ্যা নেই । স্বপ্ন হল অচেতন মনের বহিঃপ্রকাশ ।
ঃ অবচেতন মন কি ?
ঃ আমিও ঠিক বুঝিনা । মনের চাপা কল্পনা হতে পারে । সেই রকম একটা কিছু হবে ।
ঃ রামুও তো বিয়ের স্বপ্ন দেখেছিল , ও তো মারা যায়নি ।
ঃ তুই তো দেখেছিস বিয়ে হবে, রামু দেখেছিল যে ওর বিয়ে হয়ে গেছে, পালকি করে শ্বশুর বাড়ী যাচ্ছে । স্বপ্ন সত্যি হলে ওর তো হাড়ে দূর্বা গজানোর কথা । ও তো স্বপ্ন দেখার পরও বেচে আছে ।
ঃ ও তো স্বপ্ন বিশ্বাসই করেনা ।
ঃ তুই ও স্বপ্ন বিশ্বাস করিস না । দেখবি তোরও কিছু হবেনা । সব আজগুবি কথা ।
ঃ কি জানি । হলেও হতে পারে ।
ঃ দেখিস কিচ্ছু হবেনা । যারা স্বপ্ন বিশ্বাস করে তাদেরই শুধু বিপদ হয় , যারা বিশ্বাস করেনা তাদের কিছুই হয়না । আমি স্বপ্ন টপ্ন মানিনা ।
ঃ তুই স্বপ্ন বিশ্বাস করিসনা ?
ঃ না ।
ঃ আমার অবস্থা কি জানিস ?
ঃ আমারও স্বপ্ন তেমন একটা বিশ্বাস হয়না ।
ঃ তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন ?
ঃ সবাই বিশ্বাস করে দেখে দেখে আমারও একটু একটু বিশ্বাস হয় ।
ঃ এক কাজ কর । দেখিস ভয় একেবারেই থাকবেনা । দরজা বন্ধ করে জোরে জোরে তিনবার চিৎকার করে বলবি ভয় নাই সাহস আছে , বল ।
ঃ আসমা সত্যি সত্যি তিনবার চিৎকার করে বলল ,
ভয় নাই সাহস আছে
ভয় নাই সাহস আছে
ভয় নাই সাহস আছে ।
হাবিবা বলল, তোর ভয় কি কমছে ?
ঃ হ্যাঁ ।
ঃ কমেছে কেন জানিস ?
ঃ না ।
ঃ এটা এক রকমের অটো সাজেশন ।
ঃ অটো সাজেশন কি ?
ঃ নিজেকে নিজে কথা বলে সাহস দেয়া ।
ঃ শিখেছিস কোথায় ?
ঃ সলেমান স্যার একদিন বলেছিল ।
ঃ তুই তো বলিস সলেমান স্যার সারাদিন ভ্যাজর ভ্যাজর করে ।
ঃ ভ্যাজর ভ্যাজর করে সত্যি কিন্তু তাঁর মধ্যে দু একটা ভাল কথা বলে । আসমা শোন , সলেমান স্যার কে একটা নাম দিলে কেমন হয় ?
ঃ কি নাম ?
ঃ হনুমান স্যার ।
ঃ মা শুনলে পিঠের ছাল তুলে দেবে ।
ঃ মা শুনবে কেন, তুই আর আমি শুধু জানব । সলেমান স্যার কে দেখতে হনুমান এর মত লাগেনা ? শুধু লেজ নেই ।
ঃ তুই ভাল জানিস । আমি অতসব বুঝিনা ।
চলবে ………………………
Leave a Reply