রজনী (উপন্যাস) পর্ব- ২
ক্যাটাগরি: ক্যাটাগরি বিহীন | তারিখ: 22/12/18 | No Comment
( আমার লেখা প্রথম ও শেষ উপন্যাস । এই উপন্যাসটি একটি সত্যি ঘটনার উপরে ১৯৯৮ সালের প্রেক্ষাপটে লেখা । এই উপন্যাসে কোনো শিক্ষণীয় কিছু নাই , জাস্ট একটি সত্যি প্রেমের কাহিনীকে উপন্যাসের মত করে পর্ব পর্ব করে আপনাদের সাথে উপস্থাপন করবো । খুব হালকা ও সাহিত্যমানহীন এই লেখা পড়ে সময় নষ্ট করার আগে আরেকবার চিন্তা করুন , আপনি কি এই লেখা পড়ে সময় নষ্ট করবেন ?
.
আজ থেকে ২০ বছর আগে এই উপন্যাসটি লিখেছিলাম ।
.
আজ পড়ুন ২য় পর্ব ! অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা যাবে না । ধারাবাহিক ভাবে পর্ব পর্ব আকারে এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে । পাত্রপাত্রীর নাম , স্থান কাল্পনিক )
.
রজনী
মোঃ ফাইজুল হক
.
রাত সাড়ে বারটা । হাবিবার ঘুম আসছেনা । হাবিবাদের বাড়িটা দোতালা । ছাদের উপর একটা চিলেকোঠা আছে । এই ঘরটার চারদিকে জানালা থাকায় ঘরে প্রচুর আলো আসে । হাবিবা চিলেকোঠার এই ঘরটিতে থাকে । এই ঘরে আগে থাকতেন হাবিবার ছোট চাচা আলাউদ্দিন সাহেব । আলাউদ্দিন সাহেব স্কলারশিপ নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া গেছেন পড়াশুনার জন্য । আলাউদ্দিন সাহেব দেশে আসলে হাবিবার এই ঘরটা তাঁকে ছেড়ে দিতে হয় ।
এই ঘরটায় একটা বিশেষ সুবিধা আছে । রাত বিরাত যখন তখন ছাদে চলে আসা যায় । ছাদে বসে জোছনা উপভোগ করা যায় । হাবিবা কিছু লেখালেখি করতে চেয়েছিল । লিখতে বসে কিছু মনে আসছেনা । হাবিবার কাদতে ইচ্ছে করে । যখন কোন কাজ থাকে তখন মাথায় হাজারটা আইডিয়া আসে । কিন্তু লিখতে বসলে মাথাটা ভোতা হয়ে যায় । মন খারাপ করে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে তাতে কোন লাভ হচ্ছে না । লেখার মত কোন আইডিয়াও মাথায় আসছেনা । আবার ঘুম ও আসছেনা । সময়টাও একেবারেই অসহ্য লাগছে । হাবিবা ছাদে চলে আসে । হাবিবা চেয়ারে হেলান দিয়ে টেবিলের উপর পা তুলে বসে । রিলাক্স হবার চেষ্টা করে ।
হাবিবাদের বাড়ীর দারোয়ান মনতাজ মিয়া । বয়স পঞ্চাশ এর কাছাকাছি । মনতাজ মিয়া সারাদিন ঘুমান , আর সারারাত জেগে থাকেন । গভীর রাতে একা একা গান করেন । মনতাজ মিয়ার গলা ভালনা । তবুও তাঁকে কেও গান গাইতে নিষেধ করেনা । গান গেয়ে গেয়ে রাত জেগে থাকেন । এটা অন্যায় হতে পারেনা । মনতাজ মিয়া এ বাড়ীর গ্যারেজে থাকেন । ছাদ থেকে মনতাজ মিয়ার ঘরটা দেখা যায় ।
মনতাজ মিয়া আয়েশ করে বিড়ি টানছেন । ছাদ থেকে বিড়ির আগুন দেখা যাচ্ছে । তিনি বিড়ি টানছেন আর গান গাইছেন –
আমার দুঃখে কেও কান্দে না
কান্দে চান্দ তারা
আমার তরি ওকুল গাঙে
বইঠা মাঝি ছাড়া
দয়াল তুমি ভাসাও তরি
দয়াল তুমি ভাসাও তরি
নইলে আমি কুলহারা
কান্দে চান্দ তারারে
কান্দে চান্দ তারা …
মনতাজ মিয়ার গান সবসময় বেসুরা লাগে । হাবিবার কাছে আজ এই গান বেসুরা লাগছেনা । অর্থহীনও মনে হচ্ছে না । হাবিবার মনে একেক সময় একেক রকম ভাব আসে । হৃদয়ে বিচিত্র সব অনুভূতি অনুভিব করা যায় , সব অনুভূতি প্রকাশ করা যায়না । মনের সব আকুতি মানুষকে দেখানো গেলে মানুষ কেউ কারো সমালোচনা করতো না ।
কতো বিচিত্র করেই না বিধাতা এই জগত সংসার সৃষ্টি করেছেন । তারা ভরা গভীর রজনীতে এসব ভাবতে হাবিবার ভীষণ ভাললাগছে । হেলান চেয়ারে খোলা আকাশে ভাবের স্রোত আসে । রাত যত গভীর হয় ভাবও তত বাড়ে । দিন বলতে কোন কিছু না থাকলে ভাল হত । অনন্ত অসীম রাত । হেলান চেয়ারে বসে সীমাহিন ভাবনা । মাদকীয় জীবন । অনুভবের সাগরে হাবিবা যেন তলিয়ে যাচ্ছে । মনতাজ মিয়ার গান যেন হাবিবার হৃদয়ের গান । উপরে তারা ভরা আকাশ নিচে অকূল দরিয়ায় বৈঠা মাঝি ছাড়া হাবিবার তরি ।
হাবিবা যেন আর মানুষ হাবিবা নেই । আকাশ পৃথিবীর সাথে মিলে মিশে সে যেন একাকার হয়ে গেছে । সবার উপরে মানুষ , সবাই সমান । সৃষ্টি রহস্য যেন সাদা কাগজের মত পরিস্কার । কে আমি ? বিধাতার সৃষ্টি একটা প্রান । কে এই আজিমুদ্দিন ? সেও একটা প্রান । মনতাজ মিয়া কে ? সেও তো একটা প্রান । তাহলে কেন আমি মহাসুখে ছাদে আর মনতাজ মিয়া কষ্ট করে রাত জাগে , আর কাদে । কেন মানুষে মানুষে এই পার্থক্য । কেন বিখ্যাত ধনী বিল গেট্স নিজের সম্পদের হিসেব জানেনা ? শুভর মত ছোট্ট শিশু পরের ঘরের চাকর ?
আসমার ডাকে হাবিবার চিন্তায় বাধা পরে । হাবিবা এতো রাতে খোলা ছাদে বসে আছিস কেন ?
ঃ এমনি ।
ঃ এখন রাত কটা বাজে জানিস ?
ঃ ধর এগারটা কি সারে এগারটা বাজে ।
ঃ এখন রাত দুইটা বেজে দশ মিনিট । তোর হয়েছে কি ? এত ভাবিস কি ?
ঃ কিছু হয়নাই । কেন জানি ঘুম আসছেনা ।
ঃ তুই কাকে নিয়ে এত ভবিস ?
ঃ তুই যা ভাবছিস তা না । ভাব্বার মত কেও নেই ।
ঃ আমার কাছে সত্য কথা বললে তোর হয় কি ? বলনা , কারো কাছে বলবনা ।
ঃ সত্যিই বলছি , ভাব্বার মত আমার কেও নেই ।
ঃ তাহলে তুই কি ভাবছিস ?
ঃ তুই বুঝবিনা ।
ঃ বুঝিয়ে বল ।
ঃ বুঝিয়ে বলা যাবেনা । আর বললেও তুই বুঝবিনা ।
ঃ একশ বার বুঝবো ।
ঃ আকাশের দিকে তাকা , কিছু দেখিস ?
ঃ কই কিছুই তো দেখছিনা ।
ঃ তারাও দেখিসনা ?
ঃ হ্যা, দেখি ।
ঃ কেমন দেখসিস ?
ঃ কেমন দেখব আবার ? তারা তো তারার মত । রোজ যেমন দেখি আজও তেমন দেখছি ।
ঃ তুই কি তারা্র ভাষা শুনতে পাস ?
ঃ তারা আবার কথা বলে নাকি , যে ভাষা বুঝব !
ঃ আরও কিছু শুনছিস ?
ঃ মনতাজ মিয়ার গান শোনা যাচ্ছে ।
ঃ কেমন লাগছে ?
ঃ কেমন লাগবে আবার ? গ্যা গ্যা করে গান গাইছে । গান শুনলে পাদ আসে ।
ঃ হাবি জাবি বলবিনা । আগেই বলেছি তুই বুঝবিনা ।
ঃ তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে ?
ঃ বক বক করিসনা , নিছে গিয়ে ঘুমা । যা ভাগ ।
রাত আড়াইটার সময় ছাদে মেয়েদের কথা শুনে জাহানারা বেগম ছাদে চলে এসেছেন । এই বয়সী মেয়েদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে হয় । বলা যায়না কখন কোন বাজে চিন্তা মাথায় ঢোকে । মেয়েদের এই বয়সটা খুবই খারাপ , বাস্তব চিন্তা মোটেও থাকেনা । এদের আবেগ বেশি । বেশি আবেগের ফলাফল শুভ হয়না ।
বেশি আবেগের ফলাফল যে শুভ হয়না তাঁর উদাহরন এবাড়ীতেই রয়েছে । আসমা হাবিবার ছোট ফুফু নুসরাত জাহান আবেগের বসে এবাড়ীর দারোয়ান মালেক মিয়ার শ্যালকের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল । সেই যে বাড়ী থেকে বের হল এবাড়ীতে তাঁর আর যায়গা হলনা ।
পরে এসে তাঁর বাবা আজিমুদ্দিন সাহেবের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে । সে কান্না দেখে বাড়ীর সবার চোখে পানি এসে গিয়েছিল কিন্তু আজিমুদ্দিন সাহেবের মন গলেনি।
তিনি কঠিন করে বলেছেন – তুই এবাড়ীর কেউ না । তোর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই । তোর সাথে যে সম্পর্ক রাখবে এ বাড়ীতে তাঁরো কোন জায়গা নেই । এই মুহূর্তে বেড়িয়ে যা । আসমা হাবিবার দাদিজানও স্বামীর পায়ে ধরে কেদেছেন । শত হলেও তো তোমার মেয়ে ওকে মাফ করে দাও । আজিমুদ্দিন সাহেব দাদীজানের পিঠে লাথি মেরে বলেছিলেন , মেয়ের ব্যাপারে উদাসীন থাক মাগি এখন আবার ফুস কান্না । ও আমার মান ইজ্জত নষ্ট করেছে । ও আমার মেয়েনা ।
মেয়ে চলে গেল, সেই সাথে দারোয়ানেরও চাকরী খতম ।
নুসরাত জাহান তখন সবে মাত্র কলেজে উঠেছে । চোখে মুখে উচ্ছলতার ভাব । দারোয়ান মালেক মিয়ার খোজে তাঁর ছোট শ্যালক ইমরান এ বাড়িতে প্রথম আসে । কলিং বেল টিপতেই নুসরাত দরজা খোলে ।
ঃ কাকে চান ?
ঃ ইয়ে মানে এটা আজিমুদ্দিন সাহেবের বাড়ী না ?
ঃ হ্যা , কাকে চান ?
ঃ মালেক ভাই বাড়িতে আছেন ?
ঃ বাজার করতে গেছেন , একটু পরেই এসে পরবেন । মালেক মিয়া আপনার কি হয় ?
ঃ দুলা ভাই ।
ঃ বসেন, একটু পর এসে পরবেন ।
ইমরান ছেলেটা দেখতে সুদর্শন । দেখতে মনে হয় যেন জমিদার পুত্র । পরিচয় নিয়ে জানা গেল ডিগ্রী সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে । নুসরাত যে কলেজে পড়ে সেও ওই একই কলেজে পড়ে । ভাল গান গাইতে পারে । এইযে পরিচয় হল এই পরিচয় ই নুসরাত জাহানের বাড়ী ছাড়ার কারন হল । বাড়ী ছেড়ে পালানোর আগে কেও কিছু টেরই পেলনা ।
প্রথম দিকে নুসরাত জাহান রেগুলার কলেজে যেতে শুরু করল । ঝড় হোক তুফান হোক কোন মতেই কলেজ কামাই নাই । ক্লাস করার নামে কলেজে গিয়ে ফুস ফুস কথা চলে । বাড়ির সবাই ভাবল লেখাপড়ায় মনোযোগ দিয়েছে । সবাই খুশি । এরকম চলল কিছুদিন । শেষদিকে দেখা গেল নুসরাত জাহান চুপ করে থাকে । তেমন একটা কথা বলেনা । বিকালে রাতে ছাদে বসে কি যেন ভাবে । একদিন সকালে ক্লাসের নাম করে বের হল । বিকাল চারটায় ফেরার কথা কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়ও ফিরে আসলোনা । বিভিন্ন আত্মীয়ের বাসায় খোঁজ করা হল । বিভিন্ন জায়গায় টেলিফোন করা হল । রাত দশটায়ও কোন খোঁজ পাওয়া গেলনা । পুলিশ ষ্টেশনে ষ্টেশনে ফোন করা হল । মাইকিং করার কথা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে । শেষে এই চিন্তা বাদ দেয়া হল । এতে কেলেঙ্কারি হবার সম্ভাবনা বেশি ।
আসমা হাবিবার ছোট চাচা আলাউদ্দিন সাহেব মোটর সাইকেল নিয়ে বের হলেন । চিন্তায় বাড়ীর কারো চোখে ঘুমনেই । আসমার দাদীজান থেমে থেমে কাদছেন । পাড়ার মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছ থেকে তাবিজ এনে পাথর চাপা দেয়া হল । যদি কেউ অপহরণ করে থাকে তাহলে সাত ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে ফেরত দিয়ে যাবে ।
সেই তাবিজও সহজে পাওয়া যায়নি । তাবিজ লেখার জন্য হরিনের চামড়া দরকার । রাত দশটার সময় হরিনের চামড়া পাবেন কোথায় ? শেষে অনেক খোঁজা খুঁজি করে নতুন হরিনের চামড়া স্যান্ডেল কেনা হল । দাম সাতশত পঞ্চাশ টাকা । সেই স্যান্ডেলের চামড়া খুলে তাতে তাবিজ লেখা হল ।
রাত তিনটার দিকে খবর পাওয়া গেল আমতলার বস্তিতে আছে । মালেক মিয়ার শালা ইমরানের সাথে পালিয়েছে । খবর শুনে আজিমুদ্দিন সাহেব এক গ্লাস পানি পান করলেন । তিনি মুর্ছা গেলেন । এক ঘন্টা পর তাঁর হুশ ফিরে এল । তিনি উঠে বসলেন , ঠান্ডা মাথায় বললেন গেছে থাক । ওকে ফিরিয়ে আনার দরকার নাই । খবরদার আলাউদ্দিন ওকে আনবিনা । ও আমার মেয়ে না । এ বাড়ির কারো সাথে ওর কোন সম্পর্ক নাই । সব সম্পর্ক ছিন্ন করা হল । এই বলে তিনি আবার সুয়ে পড়লেন । সুয়েই ঘুম ।
জাহানারা বেগম ছাদে এসে বললেন এত রাতে তোরা ছাদে এসে কি পেচাল শুরু করেছিস ? কি হয়েছে কি ? আসমা বলল ও ছাদে একা একা বসে কি যেন ভাবছে । আমি এসেছিলাম এম্নি একটু হাওয়া খেতে । এসে দেখি ও বসে আছে । জাহানারা বেগম হাবিবা কে লক্ষ করে বললেন , না ঘুমিয়ে ছাদে বসে কি ভাবছিস ?
ঃ কিছু ভাবছিনা , ঘুম আসছিলনা তাই
ঃ ঘুম আসবেনা কেন ?
ঃ ঘুম কি আমার নিজের ইচ্ছায় আসবে ?
ঃ পড়তে বসলে তো ঘুমের অভাব থাকেনা ।
ঃ এখন ঘুম না আসলে আমি কি করব । ছাদে বসা কি অন্যায় হয়ে গেসে ? নাকি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে ।
ঃ মহাভারত শুদ্ধ নাকি অশুদ্ধ তা কি তোর কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে ? মেয়ে ছেলেদের সময় অসময় ছাদে আসতে নেই । মুরুব্বিদের নিষেধ আছে ।
ঃ মা তোমরা ছাদে বসনা ? তাতে তো কোন দোষ হয়না ।
ঃ আমরা তো তোর মত গভীর রাতে একা একা বসে থাকিনা ।
ঃ একা একা বসে থাকলে কি হবে ?
ঃ তোর কাছে সব জিনিস ব্যাখ্যা করতে হবে নাকি । রাতে কত কি চলাফেরা করে । সময় অসময় বসে থাকলে জীন-ভূতের নজর লাগতে পারে ।
ঃ আমি জীন-ভূত মানিনা ।
ঃ তুই না মানলে বসে থাক । জাহান্নামে যা । এই আসমা তুই ঘুমাতে যা । ও যা ইচ্ছা করুক ।
জাহানারা বেগম গজ গজ করতে করতে আসমাকে নিয়ে নিচে নেমে গেলেন । হাবিবা মন খারাপ করে ঘুমাতে গেল ।
মোস্তফা সাহেব জাহানারা বেগম কে বল্লেন – “এত রাতে ছাদে চেচামেচি হচ্ছিল কেন ?
ঃ চেচামেচি কোথায়, আসমা হাবিবার সাথে কথা বলছিলাম ।
ঃ ওরা ছাদে কি করছিল ?
জাহানারা বেগম সত্য ঘটনা চেপে গেলেন । আমতা আমতা করে বললেন – এই গল্প টল্প করছিল আরকি ।
ঃ এত রাতে ছাদে গল্প করা কেন ?
ঃ আমি জানিনা ।
ঃ তুমি জানবে কেন । দেশ দুনিয়ার খবর তো রাখনা । আজ কি হয়েছে জান ?
ঃ কি হয়েছে ?
ঃ নজর রাখতে কি আর এম্নি এম্নি বলি , তোমার মেয়ের নামে চিঠি এসেছে ।
ঃ কার নামে ?
ঃ কার নামে আবার । হাবিবার নামে ।
ঃ কে দিয়েছে ?
ঃ তোমার আদরের জামাতা দিয়েছে । শালা শুয়োরের বাচ্চা চিঠি লেখার আর জায়গা পায়না । চিনতে পারলে দুই ঠ্যাঙ ভেঙ্গে পঙ্গু হাস্পাতালে পাঠিয়ে দিতাম ।
ঃ তুমি তো চিঠির কথা আগে বলনি ।
ঃ বলে হবেটা কি ,তোমাকে বলা আর না বলা একই কথা । তোমার কোন হুঁশ আছে ? তুমি হচ্ছো বেহুঁশ ।
ঃ কই দাও , চিঠিটা দেখব ।
জাহানারা বেগম চিঠি দেখছেন । নাম ঠিকানা বিহীন চিঠি । চিঠির ভাষা এরকম –
হাবিবা প্রেয়সী আমার
হৃদয়ের সবটুকু সোনালী শুভেচ্ছা তোমার জন্য পাঠালাম । চিঠিতে ঠিকানা দিলাম না । আমি জানি তাঁর পরেও তুমি আমায় চিনতে ভুল করবেনা । জানিনা এতদিন কলেজ টাইমে রাস্তায় দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার মন জয় করতে পেরেছি কিনা । আমি জানি তুমি আমার চোখের ভাষা ঠিকই বুঝতে পেরেছ । তুমি যদি আমাকে ভালবাসা না দাও তবে আমি বাঁচবোনা । আগামিকাল যদি তুমি লাল শাড়ী পড়ে কলেজে আস তাহলে বুঝব তুমি আমাকে ভালবাস । সুখে থেক ।
ইতি
তোমারই হৃদয়
জাহানারা বেগম ভ্রু কুচকে বললেন , চিঠিটা আগে দেখাওনি কেন ? হাবিবার কাছে আমি জানতে চাইতাম কে সেই ছেলে ?
ঃ তুমি কি মনে কর জানতে চাইলেই তোমার মেয়ে হুট করেই বলে দিবে অমুকের ছেলে অমুক । এ যুগের ছেলেমেয়েরা চালাক ।
ঃ তাহলে তুমি কি করতে চাও ?
ঃ দেখি তোমার মেয়ে কাল সকালে লাল শাড়ী পড়ে কিনা । লেখাপড়া তাহলে জনমের মত বন্ধ করে দিব ।
ঃ চিঠি রইল তোমার কাছে ও লাল শাড়ী পড়ার কথা জানবে কি করে ?
ঃ কাল সকালে ওর কাছে চিঠি পাঠানের ব্যবস্থা করব । দেখি ও কতটা দোষী অথবা নির্দোষ ।
জাহানারা বেগম চুপ করে রইলেন । তিনি গভীর ভাবনায় পড়ে গেছেন । সঠিক ভাবে বুঝতে চেষ্টা করছেন – হাবিবার রাত জেগে ছাদে বসে থাকা আর এই চিঠি এর মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা ।
জাহানারা বেগম মাথায় যন্ত্রণা অনুভব করছেন । তাঁর সামনে বিপদ সংকেত ।
চলবে ………………………………
Leave a Reply