তেল ছাড়া রান্নার প্রাক্টিক্যাল পদ্ধতি
ক্যাটাগরি: ক্যাটাগরি বিহীন, শারীরিক স্বাস্থ্য, স্বাস্থকর খাবার | তারিখ: 11/10/18 | No Comment
রান্নার তেল মানেই হলো ট্রাইগ্লিসারাইড । আর কোলেস্টেরল আসে মাছ, মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবার থেকে । আসুন জেনে তেল ছাড়া রান্না করার প্রাক্টিক্যাল পদ্ধতি কি –
সহজ কথায় প্রাণীজ সোর্স থেকে আসে কোলেস্টেরল আর উদ্ভিজ্জ সোর্স থেকেট্রাইগ্লিসারাইড । ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরল উভয়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো মানুষের স্থূলতা , ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপের কারণ। প্রয়োজনের বেশি তেল গ্রহণের ফলে হৃদরোগ , গ্যাস্ট্রিক ও আলসার হয়।
পূর্ণবয়স্ক, যাঁদের শারীরিক বৃদ্ধি থেমে গেছে অর্থাৎ যাদের বয়স ২০ বছরের বেশি তাঁদের তেল ছাড়া খাবার খাওয়া প্রয়োজন এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এটা অপরিহার্য। খাবারে এমনিতেই চর্বি লুকানো থাকে। প্রয়োজনীয় চর্বি তা থেকেই পাওয়া যায়। তাই আলাদা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
অনেকের ধারণা, অলিভ অয়েলে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কম। তাই রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন। এ ধারণা ভুল। উদ্ভিজ্জ সব তেলেই ট্রাইগি্লসারাইড থাকে। এ কারণে খাবারে সব ধরনের তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ভালো।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, খাদ্যগুণ ও স্বাদ নির্ভর করে তেলে নয়, মসলায়। তেল আলাদা কোনো স্বাদ যুক্ত করে না। তেলবিহীন রান্না পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছি আমরা ।
দেহে পুষ্টির জন্য ১৮ শতাংশ তেল প্রয়োজন। এর কিছু অংশ লিভার তৈরি করে। বাকি অংশ শাক-সবজি, ফল থেকে আসে। অথচ তেল ছাড়া খাবারের কথা আমরা ভাবতেই পারি না। তেলের নিজস্ব কোনো স্বাদ নেই। স্বাদ নির্ভর করে মসলার ওপর। রান্নায় ব্যবহৃত সব মসলাই ওষধি গুণাগুণসম্পন্ন। এসবের পরিমিত ব্যবহার শরীরের উপকার, খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিসহ তেলের চাহিদা পূরণ করে। তাই আমাদের পরামর্শ ‘তেলবিহীন রান্নায় তেলের পরিবর্তে পানি ব্যবহার করুন। এতে খাবারের স্বাদের তারতম্য হয় না।
শাকসবজি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে পোলাও, খিচুড়ি, স্যুপ, ডেজার্ট_সব ধরনের রান্নাই তেল ছাড়া সম্ভব। কী রান্না করবেন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিন। সে অনুযায়ী মসলা ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করুন। মসলা কষাতে তেলের পরিবর্তে পানি ব্যবহার করুন। সকালের নাশতায় রাখতে পারেন রুটি, তেল ছাড়া স্ন্যাকস, স্যুপ বা সবজি। দুপুরে তেল ছাড়া ডাল ও সবজি। সঙ্গে সালাদ। একইভাবে রাতের খাবারও। শুধু তেলের পরিবর্তে পানি ব্যবহার করুন।
উৎসব বা পালা-পার্বণে তৈরি করুন তেলবিহীন পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি , এ ছাড়া তৈরি করতে পারেন হালুয়া, কাস্টার্ড, ফিরনি, সেমাইসহ সব ধরনের মিষ্টান্ন, রায়তা ও ডেজার্ট। এমনকি সম্ভব আচার, জ্যাম, মোরব্বা, চাটনি ও সসও।
* রেসিপি জেনে নিন ও উপকরণ সঠিক পরিমাণে দিন।
* সঠিক পাত্র, ঠিক তাপ, পরিমাণমতো পানি এবং পাত্রের মুখ খোলা বা বন্ধ করে রান্না করার বিষয়গুলো জেনে নিন।
দৈন্নদিন রান্নায় তেল দিয়ে রান্না করাটা একটা প্রথা বা রীতি বা ধাঁচ হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের বিশ্ব্বাস করতে অভ্যাস করানো হয়েছ যে, তেল ছাড়া রান্না করা যায় না। আসলে তেলে স্বাদ হয় নাকি মসলায় স্বাদ হয় এটা বুঝলে তেল ছাড়া রান্না করা খাদ্যের স্বাদ বা পুষ্টির কোন হ্রাস হয় না।
এবার আসুন প্রাক্টিক্যাল ভাবে শিখে নেই কিভাবে তেল ছাড়া রান্না করা যাবে ।
(ক) একটা নন-স্টিক কড়াই ( বিশষ এক ধরনের কড়াই, যে কড়াইতে তেল ছাড়া সবজি ভাজলে কড়াই এর সঙ্গে সবজি গুলো আটকে যায় না )। উনানে গরম করুন।
(খ) শুকনো কড়াইতে জিরা ভাজুন, যতক্ষন না ঐগুলো সশব্দে ফাটতে থাকে ও ধুসর লালচে বর্ণ গ্রহন করে, ততক্ষন কাঠের খুনি- দিয়ে নাড়তে থাকুন।
(গ) এরপর ঐ কড়াইতে পেয়াঁজ বাটা পরিমান মত দিন এবং ভাজতে থাকুন। মাঝে মাঝে খুব সামান্য (যেমন পরিমান তেল দিতেন), সেই পরিমান পানি ছিটিয়ে নাড়তে থাকুন, যেন গরম কড়াইতে আটকে বা পুড়ে না যায়।
(ঘ) এরপর আদা ও রসুন বাটা আপনার প্রয়োজন মত ঐ গরম কড়াইতে দিন।
(ঙ) এরপর আদা ও রসুন ভাজতে-ভাজতে ধুসর বর্ন হয়ে পড়বে এবং অতি অল্প মাত্রায় বার বার পানি দিয়ে নাড়তে থাকুন। বেশি পানি এক সঙ্গে দেবেন না সেদ্ধ স্বাদ এসে যেতে পারে।
(চ) এরপর টমেটু কুচি ঐ কড়াইতে দিন এবং যতক্ষন না ফুটন- ভাব আসছে যৎসামান্য পানি দিয়ে ততক্ষন ভাজতে বা নাড়তে থাকুন।
(ছ) এরপর হলুদ গুড়ো প্রয়োজন মত দিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করুন কারন হলুদ গুড়ো রান্না হতে একটু বেশি সময় নেয়।
(জ) শেষে বাকী সমস- মশলা , যেমন-লবন, লাল মরিচের গুড়ো,ধনে গুড়ো ইত্যাদী স্বাদ ও প্রয়োজনমত ঐ কড়াইতে দিয়ে এক সঙ্গে নাড়তে থাকুন।
(ঝ) এখন তেল শুন্য ভাবে মশলা ভাজা শেষ।
(ঞ) যদি সবজি রান্না করতে চান, তবে সবজী গুলো ঐ গরম কড়াইতে ভাজা মশলার সঙ্গে দিয়ে দু-চারবার নাড়তে থাকুন। এবং প্রয়োজনমত পানি দিন এবং ফোটান।
(ট) যদি ডাল রান্না করতে চান, তবে সেদ্ধ ডাল বা ভেজানো ডাল ঐ ভাজা মশলান সঙ্গে দিয়ে গরম কড়াইতে নাড়তে থাকুন। এরপর প্রয়োজনমত পানি দিয়ে ফোটান।
(ঠ) মুরগী বা অন্যান্য মাছ, মাংস রান্নার বেলায় তৈরি ঐ মসলার মধ্যে মাছ, মাংস ছেড়ে দিয়ে নাড়তে থাকুন এবং প্রয়োজনমত পানি দিয়ে ঝোল তৈরি করুন। ( কোলেস্ট্রল বেশি থাকলে প্রানিজ আমিষ কমিয়ে ফেলুন )
(ড) এবার গরম মসলা, লবঙ্গ. জয়ত্রী, জায়ফল, কালো এলাচি,লাল শুকনো গোটা মরিচ ইত্যাদী দিন।
(ঢ) শেষে খুব সরু করে কাটা ধনে পাতা মিশিয়ে খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিন।
তেল ছাড়া রান্না করা সুখাদ্য প্রস্তুত!
Leave a Reply