গাঞ্জা নিয়া রম্য প্যাচাল
ক্যাটাগরি: ঔষধী গাছ | তারিখ: 01/10/18 | 2 Comments
( সাবধানে পড়বেন , গাঁজার উপর ভক্তি চইলা আসতে পারে লেখা টা পইড়া।) 😀
গাঞ্জা খোর , গাঞ্জা গবেষক , ভেষজবিদ , ফার্মেসির ছাত্র , হোমিওর ছাত্র , ইউনানি আর আয়ুর্বেদির ছাত্ররা পড়তে পারেন , কিছু তথ্য পাইলেও পাইতে পারেন , না পাইলে আমার কোনো দোষ নাই ! আগেই বলে রাখলাম ।
.
বিঃদ্রঃ যারা গাঞ্জাখোর না , বাট চামে চাঞ্চ পাইলেই শুকনা বা সবজি বইলা দুই একটা টান টোন দেন , তারাও পড়তে পারেন ।
.
“গাঞ্জা” কেমন যেনো নেশাময় একটা নাম , গাঞ্জা নামের সাথেই গাঞ্জুট্টি নামটা চলে আসে !! গাঞ্জুট্টি শব্ধটার শোনার সাথে সাথে চোখের সামনে গাল ভাঙ্গা , চোখ গর্তে ঢোকানো শুকনা চিমশা মারা হিরুইনচি মার্কা চেহারা হাজির হয় !! যদিও অনেক নাদুস নুদুস আলু আলু চেহারার অনেককেই দেখিছি যারা ইহাতে অভ্যস্ত ।
.
আসসা বাদ দেই এসব কথা , গাঞ্জুট্টির বর্ননা দিতে গিয়া হিরুইঞ্চি চলে আসছে আবার ডাইল , বাবা ইত্যাদি উচ্চ স্তরের জিনিশ চলে আসতে পারে ।
গাঞ্জা/গাঁজা গাছের স্ত্রী-পুরুষ আছে। দুই গাছেরই ফুল হয় । তবে শুধু স্ত্রী গাছের দ্বারাই গাঁজা , ভাং ও চরস পাওয়া যায় । পুরুষ গাছের মাদক ক্ষমতা নাই । হুমায়ুন স্যারের ভাষায় “ধিক পুরুষ গাঁজা বৃক্ষ ! ”
.
স্ত্রী গাছের শুকানো পাতাকে বলে সিদ্ধি বা ভাং !! সিদ্ধি লাভের আশায় ইদানিং কিছু বাবারা সিদ্ধির ভক্ত হয়ে যাচ্ছে ।এটা নাকি মহাপুরুষ হবার সহজ পথ । কালীপুজায় ভাং – এর শরবতের প্রচলন আছে । এটা খুব কঠিন এক জিনিশ খাইলে মা কালীর সাথে সাথে সরাসরি কথা বলা যায় । জীবন্ত মা কালী দর্শনের জন্য এ বস্তু অনেকেই আগে পান করতো । এখন করে কিনা জানিনা । এ শরবত ভয়ংকর হেলুসিনেটিং ড্রাগ । শরবতের রেসিপি জানি বাট দিমুনা । খাইয়া আকাম কইরা আমারে বিপদে ফালাইবেন তা হবে না । এ গোপন বিদ্যা গোপন ই থাক ।
.
তবে সিদ্ধি শোধনের নিয়ম টা জানানো যায় – সিদ্ধি পাতা দুধের সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিতে হবে । দুধ হালকা সবুজ বর্ন হলে দুধ ফেলে দিয়ে সিদ্ধি পাতা সংগ্রহ করতে হবে , এরপর ভালোকরে পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে সামান্য ঘিতে ভেজে বোতলে রেখে দিতে হবে । এই শোধন করা সিদ্ধি কামউত্তেজক হিসেবে আগেরকার রাজা-মহারাজারা ব্যবহার করে নারী ভোগ করতেন !!
.
আমি যেহেতু রাজা – মহারাজা না সো এসব আমার দরকার নাই ।
আমার জন্য রবীন্দ্রনাথের কবিতা –
“দেখব শুধু মুখকানি
শুনবো যদি শুনাও বানী ।“
.
এই মাল খাইয়া রাজা বাদশাদের মত যুদ্ধ মহাযুদ্ধের দরকার নাই আমার ।
আপনাদের কারো লাগলে এই কামউত্তেজক সিদ্ধির দাওয়াই নিজ দায়িত্মে ব্যবহার করতে পারেন !!
.
স্ত্রী গাছের পুষ্পমঞ্জুরী থেকে তৈরি হয় গাঁজা । কাঁচা পুষ্পমঞ্জুরী রোদে শুকিয়ে নিলে যে বস্তু পাওয়া যায় তাহাই গাঞ্জা !! আগে দেখতাম অশিক্ষিত পোলাপাইন টোকাইরা বিড়ির তামাক ফালাইয়া ব্লেট বা কেচি দিয়া গাঞ্জা কুচাইয়া বিড়ির খোসায় ঢুকাইয়া খাইতো আর কিছু গাঞ্জা বাবারা কলকিতে দিয়া সাধন ভজন করতো , আর এখন দেখি শিক্ষিত শিক্ষিত ডিজুস পোলাপাইন গুলাও সোমানে টানতেছে , কানের কাছে টুং টাং লালন বাজায় আর গাঞ্জা টানে । অবশ্য বিদেশের পোলামাইয়ারা Grass খায় , সো আমাদের ও খাইতে হবে , ওদের মত না হলে জাতে ওঠা যাবেনা , তাই জাতে ওঠার এই মহান চেষ্টা !!
.
স্ত্রী গাঁজা গাছের কান্ড পাতা এবং ফুল থেকে যে আঠালো নির্যাস বের হয় তা জমিয়ে তৈরি হয় চরস । চরস খাওয়ার একটা স্পেশাল তরীকা আছে – চরস খেতে হয় ময়লা দুর্গন্ধময় কাঁথা বা কম্বল জড়িয়ে। কাঁথা কম্বল যত নোংরা হবে , নেশা নাকি তত জমবে । এই তরীকা টা হুমায়ুন স্যারের লেখা থেকে জেনেছি ।
.
আসেন এবার গাঁজার পক্ষের কিছু কথা বলি , নাইলে গাঁজা মাইন্ট করতে পারে
.
গাঁজা Cannabinaceac ফ্যামিলির একটি গাছ যার বটানিক্যাল নামঃ Canabis Sativa Linn . বাংলাঃ গাঁজা , আরবীঃ কেন্নাব , বানজ (আমার প্রশ্ন হলো আরবরা এই মালের সন্ধান কেমনে পাইলো ?) , হিন্দিঃ গাঞ্জা , সংস্কৃতঃ সংবিদা মঞ্জরী , উগ্রা , মাদিনী .
ঔষধ হিসেবে এর ব্যবহার ব্যপক , ইউনানী , আয়ুর্বেদিক ও হোমিও ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয় ।
.
ইউনানী মতেঃ
৩য় শ্রেনীর উষ্ণ ও শুষ্ক , মাত্রাঃ ভাং ৫০০ mg থেকে 1 gm , দোশ সংশোধকঃ মধু ও গাওজবান । যৌনশক্তি বর্ধক , বীর্য গাঢ় কারক ও স্তম্ভক । পাকস্থলীর শক্তি বর্ধক , খিচুনি রোধক , পুরাতন মাথা ব্যাথা , পাগলামী , অতিরিক্ত রজঃস্রাব , জরায়ুর ব্যাথা , হুপিং কাশিতে উপকারী ।
.
আয়ুর্বেদ মতেঃ
উষ্ণবীর্য , কটু-তিক্তরস , অগ্নিবর্ধক , আনন্দদায়ক, বলবর্ধক , কামোদ্দীপক , নিদ্রাকারক , গর্ভসাবক, বেদনা হারক , আক্ষেপ নিবারক ।
মাত্রাঃ ৫০০mg
.
হোমিওতে গাঁজা দিয়ে দুইটি ঔষধ পাওয়া যায় ( আমি জানি দুইটি , বেশিও হতে পারে)
১) ক্যানাবিস ইন্ডিকা – কচি পল্বব ও পাতা দ্বারা এই ঔষধ তৈরি করা হয় ।
২) ক্যানাবিস স্যাটাইভা – কুঁড়ি দ্বারা এই ঔষধ তৈরি করা হয়
.
ক্যানাবিস ইন্ডিকার প্রদর্শক লক্ষনঃ
একমুহূর্তকে একযুগ মনে করে , সময়কে অনেক লম্বা মনে করে । অতি বিস্মৃতিশীল । আমি সাধারনত মানসিক রোগীদের জন্য এটা বেশি ব্যবহার করি । সব জিনিস ভূলে যায় , লিখতে আরম্ভ করে কিন্তু শেষ করতে পারেনা , ভুলে যায় । উম্মাদ হয়ে যাচ্ছে , সব সময় এই ভয় কাজ করে । বাচাল । সব সময় খুব আনন্দে থাকে । অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে অসভ্যের মত হাসে । সবচেয়ে মজার লক্ষন হলো স্ত্রী সহবাসের পর যাদের পীঠে ব্যাথা হয় তাদের জন্য এটা খুব কাজের ।
.
ক্যানাবিস স্যাটাইভার প্রদর্শক লক্ষনঃ
দেহের যে কোন স্থানে বিন্দু বিন্দু পানি পরার মত অনুভুতি ।
না দাঁড়িয়ে শ্বাস ফেলতে পারেনা ।
তরুন গনোরিয়ায় আমি Q শক্তির ব্যবহারে ভালো ফল পাই , নিয়ম ১ ফোটা Q সাথে চার আউন্স পানি মিশিয়ে ঝাকি দিয়ে ঘন ঘন দিতে হবে । পুজ ঘন হলে মার্ক সল দিলেই রোগ ভালো । তবে পুরাতন গনোরিয়ায় উচ্চ শক্তি ব্যবহার করতে হয় ।
তোতলামীতে – ৩০ শক্তি খুব ভালো কাজ করে ,হোমিও ডাক্তারদের কাছে পরীক্ষা প্রার্থনীয় ।
.
যাক অনেক কথা বললাম , লেখা শেষ করতে হবে , এত্ত লেখা দেখে কেউ আবার না বলে যে “ গাঞ্জা খাইয়া আবল তাবল লেখছে ” !!
.
আমার এক সিনিয়র ভাই যখন শুনলো আমি গাঞ্জা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেবো তখন সে খুব আগ্রহ নিয়ে বললো , খুব ভালো , সিগারেটের চেয়ে গাঁজা উত্তম , সিগারেটে নিকোটিন আছে গাজাতে নাই । তামাক পাতা বিদেশী পাতা আর গাঁজা দেশি , দেশপ্রেমের জন্য হলেও আমাদের গাঁজার প্রতি সমর্থন জানানো উচিৎ । বিদেশী তামাক কোম্পানি (ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো) ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গাঁজা নিষিদ্ধ করেছে , যাতে তাদের দেশের তামাক নামের বিষ দিয়ে বানানো সিগারেট খাওয়াইতে পারে । সরকারের উচিৎ সিগারেট নিষিদ্ধ কইরা গাঁজা সহজলভ্য করা “ ।
.
আমি তাঁকে কিছু বলিনি , কারন আমি জানি সে সিগারেট না খেলেও মাঝে মধ্যে গাঞ্জা টানে ।
.
লাস্ট গল্পঃ এক পীরে কলকিতে ভইরা গাঞ্জা টানে , একদিন তার এক মুরিদরে লোকজন ধইরা কইলো তোর পীর ভন্ড , পীর হইয়া গাঞ্জা খায় । আর তুই হ্যার মুরিদ , তোরে আইজগা খাইছি । তখন মুরিদ বললো “আমার বাবায় গাঞ্জা খায়না , গাঞ্জা ধ্বংস করে ” !!
সো আমার সিনিয়র ভাই মাঝে মধ্যে গাঞ্জা ধ্বংস করে , খায়না । এতে সমস্যা নাই । বড় কথা হলো সিগারেটতো খায়না !!!!
.
বিঃদ্রঃ ভগবান শিব যে বস্তু হজম করতেন , আমাদের মতো নাদানদের সে বস্তু হজম করা কম্ম না , তাই এই মাল থেকে শতহস্ত দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয় । বর্তমানের আধুনিক যুগে অনেক আধুনিক নামের ও কামের বস্তু পাওয়া যায় , যার নাম ভগবান শিব শোনেনায় ও দেখেও নায় , তাই তা হজমের ঝামেলাও নাই । আপনারা এইগুলা খাইয়া দেখতে পারেন , নেশা কইরা মরতে চাইলে গাঞ্জা বাদ দিয়া আধুনিক জিনিশ খাইয়া মরাই ভালো ।
অবশ্য গাঞ্জা খাইয়া যে আপনে মরবেন তার কোন নিশ্চয়তা নাই , ফেমাস কেউ হইয়া যাইতে পারেন , প্রথম আলোতে পড়ছিলাম , অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা কাকু ছুডো কালে নিয়মিত ও অনিয়মিত গাঞ্জা সেবন করিতেন ।
.
নিচে কয়েকটার আধুনিক মালের নাম দিলামঃ
এইচ, ব্রাউন , স্ম্যাক , ড্রাগন গিয়ার , মারিজুয়ানা , বুশ , উইড , কোকেইন , কোক , চার্লি , স্নো, ক্র্যাক , এক্সটেসি , ডাভস ,এলএসডি , ম্যাজিক মাশরুম , মাসিস , স্রুম , এমফিটামাইন , ট্রাভস , মাগিস , জেলিস , ম্যাথাডোন , পাই , লিংটাস , পাইসেপটন, সলভেন্টস ইত্যাদি এবং ইত্যাদি !!
.
তথ্য সূত্রঃ
১) আয়ুর্বেদীয় দ্রব্যগুণসার – কবিরাজ শ্রি বাদল মজুমদার – বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস অব মেডিসিন-৩য় প্রকাশ ২০১১
২) ইউনানী মেটিরিয়া মেডিকা – হাকিম আবদুর রব খান – বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিসার্চ ইন ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিসিন – ৩য় প্রকাশ ২০০৩
৩) Drug Awareness Handbook – St peter,s Community & Advice Centre , London -2nd Edition , 2003
৪) বৃক্ষ কথা – হুমায়ূন আহমেদ – অন্যপ্রকাশ –একুশে বইমেলা ২০০৯
৫)হোমিওপ্যাথিক কলেজ মেটিরিয়া মেডিকা – আলহাজ্ব (অধ্যক্ষ) ডাঃ এস শওকত আলী – ১ম ও ২য় খন্ড – ৪র্থ সংস্করন
৬) প্রথম আলো – ২০ জানুয়ারি ২০১৪
অসাধারণ লিখেছেন । আপনি পারেন ও বটে । একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে । করব ?
করেই ফেললাম ।
আমার প্রশ্নটা হলো , আপনার জীবনে কতটা সার্টিফিকেট অর্জণ করেছেন ?
আমার ধারনা কমছে কম 15টা তো হইছেই ।
আল্লাহ আপনাকে এত কষ্ট সহিন্ষু এবং এত ধৈর্যশীল করেছে আমার মাঝে মাঝে আফসোস হয় ।
https://www.faijulhuq.com/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87/
এই লিংকে গিয়ে কিছু সার্টিফিকেটের নাম দেখা যাবে , এখানে সব নাই । এইডা আপডেট করতে হবে ।