মুটকু ভাইয়া ও মুটকি আপ্পি সমাজ , আসেন এবার ওজন কমান :)
ক্যাটাগরি: পুরুষের স্বাস্থ্য, মেয়েদের স্বাস্থ্য, শারীরিক স্বাস্থ্য, সাধারন স্বাস্থ্য, স্বাস্থকর খাবার | তারিখ: 28/10/18 | 3 Comments
আপনি কি সত্যি সত্যিই মোটা ?
নিজেকে মোটা মনে হলে এক কাজ করুন , গুগলে BMI লিখে, সার্চ দিয়ে, নিজের ওজন এবং উচ্চতা দিন, BMI হিসাব করার জন্য। যদি বিএমআই ২৪.৯ এর বেশী হয় তাহলে আপনি মোটা।
.
নরমাল অবস্থায় যদি আপনার বুকের মাপ কোমর থেকে ২ ইঞ্ছি বেশী না হয়, তাহলেও আপনি মোটা, যদিও বিএমই ২৪.৯ এর নীচে বা উপরে।
আপনি যদি মোটা হন তাহলে এর মানে অবশ্যই আপনি প্রয়োজনের তুলনায় ক্যালরী অনেক বেশী খান, সেই খাওয়া শরীরে চর্বি হিসেবে জমে আপনি মোটা হয়েছেন।
.
আমরা জেনেটিক্স এমনভাবে ডিজাইনড, আমাদের যতটুকু খাবার প্রয়োজন, তার অনেক বেশী তার ক্ষুধা লাগে (প্রায় ২-৩ গুণ)। যাতে আমরা একবারে বেশী খেয়ে ফেলি ফলে শরীরে একটু চর্বি জমে এবং দুর্ভিক্ষকালীন সময়ে আমরা কম খেয়ে চলতে পারি।
যদি আমরা মানুষরা শরীরে খাবারকে চর্বি হিসেবে স্টোর করতে না পারতাম , তাহলে দুর্ভিক্ষ কালীন বা খাদ্যের অভাব হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম । দেখেন আল্লাহর কি অপার অনুগ্রহ ।
.
পৃথিবীর আধুনিক সভ্যতার আগে অনেক বেশি খাদ্য সংকট চলতো, তাই মানব জাতির সুরক্ষার জন্য এমন জেনেটিকাল ডিজাইন আসলে দরকার ছিল। আল্লাহ তাই করেছেন, অবশ্য আল্লাহ সব কিছু ভাল জানেন।
ধরেন , আপনি বাংলাদেশী, আপনার হাইট ৫-৭ ইঞ্ছি, পুরুষ। ওজন ৭০ কেজি । সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিন প্রায় ২৪০০ ক্যালরী শক্তি দেয় – এর সমতুল্য খাদ্য দরকার। এখন মনে করেন, গড়পড়তায় আপনি দিনে প্রায় ২৮০০ ক্যালরী সমতুল্য খাদ্য খাচ্ছেন। তাহলে আপনি দিনে প্রায় ৪০০ ক্যালরী বেশী খাচ্ছেন, গড়পড়তায়।
.
প্রতি দশ ক্যালরী = ১ গ্রাম চর্বি। তাহলে ৪০০ ক্যালরী অতিরিক্ত খাদ্য থেকে আপনার দেহে প্রতিদিন মাত্র ৪০ গ্রাম চর্বি জমা হবে। কিন্তু তাতেই মাসে ৩০ X ৪০ = ১২০০ গ্রাম = ১.২ কেজি ওজন বাড়বে আপনার। বছরে প্রায় ১৪.৪ কেজি বাড়বে। তবে কখনও বেশী খাচ্ছেন, কখনও একটু কম খাচ্ছেন, তাই হয়তো এত বাড়েনা। কিন্তু ৫-৬ কেজি বাড়া কিন্তু কোন ব্যাপারই না। মাত্র ৬ কেজি চর্বি যদি আপনার পেটে জমে যায়, তাহলে তা বিশাল ভুড়ি হিসেবে দেখাবে।
তাহলে এ থেকে মুক্তির উপায় কি?
উপায় একটাই, সেটা হল আপনার শরীরে ক্যালরীর অভাব তৈরি করতে হবে। তা কম খেয়ে হোক বা ব্যায়াম করে হোক। ক্যালরীর অভাব তৈরি করতে পারলে, শরীর তখন চর্বি খরচ করবে ।
.
ধরেন , আপনি দিনে ২০০০ ক্যালরী করে খাওয়া একবার অভ্যাস করে ফেললেন, খুব স্ট্রিক্টলী ফলো করলেন, যে কিছুতেই ২০০০ এর বেশী খাবেন না। তাহলে দিনে প্রায় ২৪০০ – ২০০০ = ৪০০ ক্যালরী ডেফিসিট হবে। মানে দিনে ৪০০/১০ = ৪০ গ্রাম ফ্যাট ঝরবে। তাহলে মাসে ১.২ কেজি কমবে ওজন। যদি আপনি ব্যায়াম করে ২৬০০ ক্যালরী নীড তৈরী করতে পারেন, কিন্তু খাবার ঠিকই ২০০০ ক্যালরি খান, তাহলে দিনে ৬০০ ক্যালরী ডেফিসিট তৈরী হবে, এবং দিনে ৬০ গ্রাম কমবেন। মাসে ৬০ X ৩০ = ১৮০০ গ্রাম= ১.৮ কেজি কমবেন। আপনি যেই হারে নিজেকে কমাতে চান, ঠিক সেইভাবে কমাতে পারবেন।
.
আমাদের সমস্যা হল , এত হিসাব করে কি খাওয়া যায়? তারচেয়ে জিমে যামু আর ওজন কমামু , আসলে কি জিমে ওজন কমবে ?
.
আসলে ব্যায়াম করে খুব একটা লাভ হয়না, কারণ অনেক ব্যায়াম করলেও সামান্য ক্যালরী খরচ হয়। মনে করেন, একটা পুশ আপ মাত্র এক ক্যালরি যায়। তাহলে ১০০ পুশ আপ দিয়ে ভাবলেন অনেক ব্যায়াম করছি… নাহ। ১০০ পুশ আপ মানে মাত্র ১০০ ক্যালরী = দুই চামচ চিনি … এতই কম খরচ হয়। ১৫ কেজি ওজন একবার তুললেন — মাত্র ০.৭৫ ক্যালরী। ১৫ মিনিট দৌড়ালেন, মাত্র ১০০ ক্যালরী । তাই ভিগোরাস ব্যায়াম ৩-৪ ঘন্টা করলেও মাত্র ৪০০-৫০০ ক্যালরী ডেফিসিট তৈরী হয়। খুব বেশী না। এরপর এমন ক্ষুধা লাগে, যে মানু ৩০০ ক্যালরী খরচ করে ১০০০ ক্যালরী খেয়ে ফেলে, তাই লাভ হয়না। মূল পয়েন্ট এটা না যে আপনি ব্যায়াম করলেন কি করলেন না, মূল পয়েন্ট হল, আপনি কত ক্যালরী খরচ করলেন, আর কত ক্যালরী ইনপুট দিলেন- সেটার অনুপাত। যত খরচ করবেন, তার থেকে কম খেতে হবে।
.
তাহলে আমরা কি বুঝলাম ? ওজন কমাতে হবে ৯০% ডায়েট দ্বারা আর ১০% যদি চান ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়াম করলে ভাল, শরীর ফিট হয়, তবে চর্বি ঝরাতে হলে, মূল প্রায়োরিটি দিতে হবে ‘কম খাওয়া’ কে।
.
গুগলে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন, যে কোন খাদ্যে কত ক্যালরী, কিন্তু এটা তো ঝামেলা, তাই সহজে মনে রাখবেন এভাবে:
সাধারণ খাদ্য: ভাত-আলু (শর্করা জাতীয়) : ক্যালরী হল ১০০ গ্রামে ১৩০ ক্যালরী ডাল-মাছ-মাংস (কোন চর্বি ছাড়া) : ক্যালরী হল ১০০ গ্রামে ১০০ ক্যালরী চর্বি-তেল : ক্যালরী হল ১০০ গ্রামে ৯০০-১০০০ , চিন্তা করেন শুভংকরের ফাকিটা এখানেই। তেল বা চর্বি প্রায় ৯-১০ গুন ক্যালরি বেশী থাকে, তাই তেল চর্বি খাওয়া যদি খুব লিমিটেড করে দিতে পারেন, তাহলেই কিন্তু শরীরে ক্যালরী ডেফিসিট তৈরী করে ভুড়ি কমাতে পারবেন। চিনি: ১০০ গ্রামে ৪০০ ক্যালরী। তার মানে চিনি খেতে হবে খুব কম, খুব। জাস্ট ১ চামচ চিনি দিয়ে সকালে চা-কফি খাওয়া যায়। চানাচুর-চিপস: এগুলো তেলের মতই, প্রতি ১০০ গ্রামে ৬০০ ক্যালরী থাকে। তার মানে দিনে মাত্র ৩০০ গ্রাম চানাচুর খেলেই সারাদিনের ক্যালরি চাহিদা শেষ। বাকি সবকিছুই বোনাস খাচ্ছেন, চর্বি হচ্ছে। মাত্র এক চামচ তেল মাত্র ১০ গ্রাম কিন্তু ক্যালরী থাকে ১০০। তার মানে তরকারী-মাংসে একটু তেল বেশী দিলেই এক বেলাতেই ৩০০-৪০০-৫০০ ক্যালরী বেশী খাওয়া হয়ে যাচ্ছে, আমরা টেরই পাচ্ছিনা। এভাবেই মোটা হচ্ছি।
আসেন শুরু করি আজ থেকেই
- তাই শরীরে ক্যালরীর অভাব তৈরী করতে হলে,যিনি রান্না করেন তাকে বুঝান যে তরকারী বা ঝোলে, তেল খুব কম দিতে , অথবা ঝোল-তরকারী-ডাল খাবার খুব কমিয়ে দিন। পারলে না খান। কারণ অতিরিক্ত তেল দেয়া হয়। আমাদের আবার তেল ছাড়া খাবার মজা লাগে না । ডিম খাবেন সিদ্ধ , মাত্র ৪০ ক্যালরি – একটা ডিম। কিন্তু তেলে ভেজে খেলে ২০০ ক্যালরী হয়ে যাবে, কারণ ডিমের সাথে মাত্র ১২-১৫ গ্রাম তেল মিশে আছে।
- ভাত খুব কম খান, মাত্র ২০০ – ৩০০ গ্রামই যথেষ্ঠ।
- মাংস খাবার কমাতে হবে, কারণ মাংসের ফাকে ফাকে চর্বি থাকে। পিউর মাংস- যেমন মুরগী খেতে পারেন , কিন্তু ঝোল খাবেন না, বা খুব কম খাবেন ১-২ চামচ। মুরগীর চামড়া পুরাটাই চর্বি, খাওয়া যাবেনা। খেলে প্রতি ১০ গ্রামে ১০০ ক্যালরী ইনপুট হবে, সাবধান।
- গরু-খাসীর মাংসে চর্বি মিশ্রিত থাকে,না খাওয়াই ভালো , খেলেও ২-৩ টা ছোট টুকরার বেশী নয়। আর খাবার সময় বেছে বেছে চর্বিগুলো ফেলে দিবেন (গরু খাসী)। যদি ঝোল খেতেই হয়, তাহলে শুধু মসলাটা খাবেন, তেলটা ফেলে দিবেন। ওই তেলটাই ভুড়ি বানাচ্ছে।
- সবজিতে ক্যালরী ১০০ গ্রামে ৩০-৪০ খুব কম তাই সবজি-সালাদ এগুলো খেয়ে পেট ভরে রাখবেন।
- যে ফল বেশি মিষ্টি সেই ফল গুলোতে ১০০ গ্রামে ৩০০ ও যে ফল কম মিষ্টি সেই ফল গুলোতে : ১০০ গ্রামে ৪০-৫০ , তাই ফল খেতে হলে গুগলে সার্চ দিয়ে ক্যালরী দেখে খান। তবে পেয়ারা-আমড়া-আপেল এগুলোতে কম থাকে ক্যালরী।
- আপনি কম খাওয়া শুরু করলে, আপনার পেট সারাদিন খালি বলবে, আমি কিচ্ছু খাইনা, কেমনে বাচবো। এই নিয়ে টেনশন করবেন না। মাত্র ২ কেজি চর্বি শরীরে জমা থাকলে তা দিয়ে বিশ হাজার ক্যালরি হয়, তাই দিয়ে ৬ দিন আপনি বেচে থাকতে পারবেন, শুধু পানি খেয়ে। তাই খাওয়ার আসলে কোন দরকারই নেই।
- আপনার দেহের প্রায় ১৫ ভাগ ই চর্বি। মানে কোন ভুড়ি যদি নাও থাকে তাহলেও ৭০ কেজি মানুষের শরীরে দশ কেজি চর্বি থাকে। আর যদি ভুড়ি থাকে, তাহলে ভুড়ির চর্বি তার সাথে যোগ হবে। কিছু না খেয়ে শুধু পানি খেয়েই আপনি ২-৩ মাস বেচে থাকতে পারবেন, কোন প্রবলেম হবেনা। পিউর সাইন্স। সো কম খাইলে আপনি দুর্বল হয়ে যাবেন , এই কথা ভুলে যান ।
- ব্যায়াম করে ক্যালরী নীড একটু বাড়াতে পারেন। তবে খুব একটা লাভ হবেনা, যদি খাওয়া কনট্রোল করতে না পারেন।
- ডায়েট কোলা, যেগুলো তে ক্যালরি থাকেনা, সেগুলো খেয়ে পেট ভর্তি করে রাখতে পারেন। ক্ষিধা লাগবেনা, কিন্তু শরীর খাদ্য না পেয়ে বাধ্য হয়ে চর্বি খরচ করবে।মাথায় রাখবেন এগুলা কেমিকেল বেশি খেলে লিভার কিডনির বারোটা বাজিয়ে দিবে ।
- মূল পয়েন্ট একটাই, ক্যালরি যতটুকু দরকার, তার থেকে কম খেলেই ভুড়ি কমবে। যত কম খাবেন, তত তাড়াতাড়ি কমবে। আর বেশি খেলে বাড়বে। সহজ হিসাব।
তাই যদি সত্যিই সিরিয়াস হন, তাহলে একটা ওজন মাপার মেশিন কিনুন। সব খাদ্যের তালিকা বানান, তারপর ওগুলো ওজন করে করে ক্যালরী হিসাব করে খান। কথা দিচ্ছি, মাত্র ২-৩ মাসে ৭-৮ কেজি কমানো কোন ব্যাপারই না, জাস্ট মেন্টাল একটা ডিসিশন নিতে হবে। একটু পাগলামী(!!) করতে হবে। আর কিছুনা।
.
চিনি-তেল-চর্বি -ভাজা পোড়া-চানাচুর-চিপস-তরকারীর ঝোল- এগুলো বাদ দিন । সবজি-সালাদ- এইগুলা বাড়ান, ভাত খান, বাট খুব কম খান। এভাবে চেষ্টা করুন , ওজন কমবেই ।
মোটা বা ওজন কমানোর ব্যাপারে ইউটিউবে আমার দুটি ভিডিও রয়েছে সেগুলোও আপনাকে হেল্প করবে –
মোটা ও ওজন কমানোর ১০০% কার্যকর উপায় – Effective way for weight loss
মেদ কমিয়ে স্লিম হওয়ার নিরাপদ উপায় | How to lose weight fast
তা হয় বুজলাম তাহলে পেট খালি থাকলে তো গাস্টিক বারে সুনছি…??
সময়ের উপজুগি পোস্ট
বাহ চমৎকার আলোচনা
আল্লাহ আপনার মঙ্গল দান করুক।